ওলকপি

কপিগোত্রের এক অন্যতম সবজি হল ওলকপি। যদিও ফুলকপি ও বাঁধাকপির মত ওলকপি অত জনপ্রিয় না, তবুও শীত মৌসুমে এ দেশে কোন কোন এলাকায় বেশ চাষ হয়। দু’রকমের ওলকপি দেখা যায়। এক ধরনের ওলকপির রঙ হালকা বা সাদাটে সবুজ, অন্যটার রঙ বেগুনি সবুজ। তবে হালকা সবুজ রঙের ওলকপিই আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়।
উপযুক্ত জমি ও মাটি
ওলকপি চাষের জন্য সুনিকাশযুক্ত উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমির উর্বর দোয়াশ ও এটেল মাটি সবচেয়ে ভাল।
জাত পরিচিতি
হালকা সবুজ রঙের জাত আর্লি হোয়াইট ভিয়েনা এবং বেগুনী রঙের জাত আর্লি পার্পল ভিয়েনা প্রসিদ্ধ। এছাড়াও অনুপম, বাম্পার হারভেষ্ট এফ১, আর্লি বল এফ১, ক্রান্তি এফ১, নিমাজিন এফ-১ ইত্যাদি জাত চাষ করা হয়ে থাকে।
বীজ বোনার সময়
ভাদ্র থেকে কার্তিক।
বীজের পরিমাণ
প্রতি শতকে ৩.২ গ্রাম, একর প্রতি ৩২৫ গ্রাম, হেক্টর প্রতি ৮০০ গ্রাম বীজ লাগে।
চারা তৈরি
ওলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করে জমিতে লাগানো হয়। বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিত। সম পরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। বীজতলায় ছিটিয়ে বা সারি করে বীজ বুনতে হয়। পরে চারা ঠিকমত না বাড়লে প্রতি বীজতলায় (৩ বর্গমিটার) প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেয়া ভাল।
চারা রোপণ
চারায় ৫-৬টি পাতা হলেই তা রোপণের উপযুক্ত হয়। সাধারণত ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করা হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব দেয়া লাগে ৩০ সেন্টিমিটার বা ১ ফুট এবং প্রতি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব দিতে হবে ২২ সেন্টিমিটার বা ৯ ইঞ্চি। চারা রোপণের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন শিকড় মুচড়ে বা বেঁকে না যায়। এতে চারার মাটিতে প্রতিষ্ঠা পেতে দেরী হয় ও বৃদ্ধি কমে যায়।
সারের মাত্রা
প্রতি শতকে গোবর ৬০-৮০ কেজি, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি, টিএসপি ৪০০-৬০০ গ্রাম, এমওপি ৪০০-৫০০ গ্রাম, জিপসাম সার ৭০০ গ্রাম, দস্তা সার ২০ গ্রাম, বোরণ ৩০-৪০ গ্রাম সার দিতে হবে। জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার, পুরো টিএসপি, অর্ধেক এমওপি এবং বোরন সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর সার চারা রোপণের ১ সপ্তাহ আগে মাদায় দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর চারা রোপণ করে সেচ দিতে হবে। ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমওপি ও বোরন সার ৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তির সার দিতে হবে চারা রোপণের ৮-১০ দিন পর, দ্বিতীয় কিস্তির সার দিতে হবে চারা রোপণের ৩০ দিন পর এবং শেষ কিস্তির সার দিতে হবে ৫০ দিন পর।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
ওলকপি চাষে প্রচুর পানি লাগে। সারির মাঝের মাটিতে উপরি সার দিয়ে সেই মাটি আলগা করে গাছের গোড়ায় টেনে দিলে নালা তৈরি হবে। সেই নালায় সেচ দিতে হবে। গাছ বড় না হওয়া পর্যন্ত জমির আগাছা পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
ওলকপির তেমন কোন পোকা মাকড় নেই। মাঝে মাঝে লেদা পোকা ও ঘোড়া পোকা পাতা খেয়ে নষ্ট করে। কাটুই পোকা লাগানো চারা কেটে দেয়। নাবিতে লাগানো হলে জাব পোকা ধরে। কোন কোন সময় মাস্টার্ড স’ ফ­াই বা করাত মাছি এবং পাতার বিট্ল পাতার ক্ষতি করে। এত ফলন কমে যায়।
রোগ ব্যবস্থাপনা
ওলকপির পাতায় দাগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ধ্বসা বা ড্যাম্পিং অফ, ক্লাব রুট বা গদাই মূল, মোজেইক, পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে।
ফসল তোলা ও ফলন
চারা রোপণের ৪০-৬০ দিন পর থেকেই জাত ভেদে ওলকপি তোলার উপযুক্ত হয়ে যায়। কচি থাকতেই তোলা উচিত। না হলে আঁশ হয়ে শক্ত হয়ে যায় ও স্বদ নষ্ট হয়ে যায়। জাত ভেদে প্রতি শতকে ১০০-১২০ কেজি এবং হেক্টরে ২৫-৩০ টন ফলন পাওয়া যায়। তবে ইদানীং হাইব্রিড জাতসমূহ আসাতে ফলন ৫০-৬০ টন পাওয়া সম্ভব।
সংগৃহীত ও সংকলিত

Comments