- Get link
- X
- Other Apps
লোহা
বহু উৎসেচককে কার্যকর করার ক্ষেত্রে লোহা জরুরি। এটি ক্লোরোফিল সংশ্লেষে অনুঘটকের কাজ করে। উদ্ভিদের নবগঠিত অঙ্গগুলির জন্য এটি জরুরি। এর অভাবে পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়, পরবর্তীতে পাতার রঙ হলুদ হয়ে যায় ও গাছের শিরা বড় হয়ে যায়। লোহা মাটি থেকে খুব সহজেই বেরিয়ে গিয়ে মাটির একেবারে তলার অংশে সঞ্চিত থাকে। মাটিতে ক্ষারের মাত্রা খুব বেশি হলে লোহা মাটিতে থাকলেও উদ্ভিদ তা ব্যবহার করতে পারে না। লোহা সহ পুষ্টিদায়ক অম্ল দ্রবণের প্রয়োগ এই সমস্যা মেটাতে পারে।
ম্যাঙ্গানিজ
সালোকসংশ্লেষ, শ্বসন, নাইট্রোজেন বিপাকে উৎসেচকের কাজে ম্যাঙ্গানিজের প্রয়োজন। নতুন পাতায় ম্যাঙ্গানিজের অভাব ঘটলে পাতার রঙ হাল্কা সবুজ হয়ে যায় এবং অসংখ্য সবুজ শিরা দেখা দেয় (যেমন লোহার অভাবে হয়)। সমস্যা গভীর হলে সবুজ অঙ্গ সাদা হয়ে যায়, পাতা ঝরে যায়। গাছের শিরার পাশে বাদামি, কালো বা ধূসর ছোপ ছোপ হয়ে যায়। ভারসাম্যযুক্ত বা ক্ষার জাতীয় মাটিতে উদ্ভিদে ম্যাঙ্গানিজের অভাবজনিত লক্ষণ প্রকাশ পায়। অতিরিক্ত অম্লধর্মী মাটিতে এতটাই ম্যাঙ্গানিজ থাকে যে তা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
বোরন
কোষপ্রাচীর গঠন, ঝিল্লিকে ধরে রাখা, ক্যালসিয়াম গ্রহণ এবং অনেক ক্ষেত্রে শর্করার স্থানচ্যূতি ঘটানোয় বোরন সাহায্য করে। উদ্ভিদের অন্তত ১৬টি কাজে বোরন ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে রয়েছে ফুল ফোটা, পরাগরেণু বেরোনো, ফল ধরা, কোষ বিভাজন, জল ব্যবহার ও হরমোনের চলাচল। উদ্ভিদের গোটা জীবন জুড়েই বোরন প্রয়োজন। এর অভাবে কুঁড়ি ঝরে যায় এবং গাছে ছোপ ছোপ হয়ে যায়, পাতা পুরু হয় এবং কুঁকড়ে ভঙ্গুর হয়ে যায়। ফল, কন্দ ও মূল বিবর্ণ হয়ে যায়, ফেটে যায় এবং বাদামি ছোপ ধরে।
দস্তা
এটি উৎসেচকের একটি উপাদান এবং বিভিন্ন উৎসেচকের কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করে (যেমন উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটাতে একান্ত প্রয়োজনীয় অক্সিন)। শর্করার বিপাকক্রিয়া, প্রোটিনসংশ্লেষ এবং কাণ্ডের বৃদ্ধিতে এটি ভূমিকা রয়েছে। এর অভাবে পাতা কুঁকড়ে যায় ও পাণ্ডু বর্ণের হয়ে যায়। জিঙ্কের অভাব থেকে লোহার অভাবও দেখা দেয় এবং একই লক্ষণ প্রকাশ পায়। ক্ষয়প্রাপ্ত মাটি ও যেখানে পিএইচ মাত্রা ৫.৫ থেকে ৭-এর মধ্যে সেখানে জিঙ্কের অভাব ঘটে। এই মাত্রা বেশি কমিয়ে দিলে জিঙ্ক বেড়ে গিয়ে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
তামা
উদ্ভিদের শিকড়ে তামা জমে থাকে এবং নাইট্রোজেন বিপাকক্রিয়ায় সহায়তা করে। এটি বহু উৎসেচকের মধ্যে থাকে এবং যে সব উৎসেচক শর্করা ও প্রোটিন ব্যবহার করে, তাতেও অংশ নিতে পারে। এর অভাবে পাতার অগ্রভাগের পেছনের অংশ মরে যায় এবং পাতায় বাদামি ছোপ হয়ে যায়। জৈব উপাদানে তামা দৃঢ়বদ্ধ থাকে কিন্তু মাটি জৈব চরিত্রের হলে তামার অভাব হতে পারে। এটা মাটি থেকে হারিয়ে যায় না ঠিকই কিন্তু অনেক সময়ই পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত তামায় বিষক্রিয়া ঘটে।
মলিবডেনাম
যে সব উৎসেচক নাইট্রেটকে অ্যামোনিয়ায় রূপান্তরিত করে, সেগুলিতে মলিবডেনাম থাকে। এর অভাবে প্রোটিনসংশ্লেষ বন্ধ হয়ে যায় এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধি থেমে যায়। শিকড়ে নাইট্রোজেন জোগান দেয় যে ব্যাকটেরিয়া, তারও মলিবডেনাম প্রয়োজন হয়। এর অভাবে বীজের গঠন সম্পূর্ণ হয় না এবং উদ্ভিদে নাইট্রোজেনের অভাব ঘটে। এর অভাবে পাতা বিবর্ণ হয়ে যায় এবং ধারের দিকগুলো ভাঁজ হয়ে যায়।
ক্লোরিন
অসমোসিস (জলের চলাচল), সালোকসংশ্লেষ এবং খনিজ পদার্থ সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় আয়নের ভারসাম্য রক্ষায় ক্লোরিনের ভূমিকা রয়েছে। এর অভাবে গাছ নুয়ে পড়ে, শিকড় মোটা হয়ে যায়, উদ্ভিদ হলুদ হয়ে যায়। কোনও কোনও গাছের গন্ধ কমে যায়। উদ্ভিদ, ক্লোরিনের আয়নীয় রূপ ক্লোরাইড ব্যবহার করে। ক্লোরাইড দ্রবণ আকারে পাওয়া যায় এবং সহজে বেরিয়ে যায়। ক্লোরিন বেশি হয়ে গেলে কোনও কোনও গাছে বিষক্রিয়া দেখা দেয়।
নিকেল
নিকেল এমন একটি উপাদান, যা উদ্ভিদে অতি সামান্য পরিমাণে লাগলেও অপরিহার্য। নিউইয়র্কের ইথাকার উদ্ভিদ, মাটি ও পুষ্টি গবেষণাগারের কৃষি গবেষণা পরিষেবা সম্প্রতি নিকেলকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউরিয়া থেকে নাইট্রোজেনকে মুক্ত করে গাছের ব্যবহারের উপযোগী করতে ইউরিয়েজ উৎসেচককে সাহায্য করে নিকেল। লোহা শোষণক্রিয়াতেও নিকেল কাজে লাগে। অঙ্কুরোদ্গমের জন্য বীজেরও নিকেল প্রয়োজন হয়। বাড়তি নিকেল ছাড়া যে সব গাছ বেড়ে ওঠে, তারা যখন পরিণতিতে পৌঁছয় বা জননপ্রক্রিয়া শুরু করে তত দিনে ধাপে ধাপে তাদের মধ্যে নিকেলের অভাব দেখা দেয়। যদি নিকেলের অভাব থাকে তা হলে অনেক সময় উদ্ভিদ ক্ষমতাসম্পন্ন বীজ ফলাতে পারে না।
সোডিয়াম
উদ্ভিদের অসমোসিস প্রক্রিয়া (জলের চলাচল) এবং আয়নীয় ভারসাম্য রাখতে সোডিয়াম কাজে লাগে।
কোবাল্ট
কলাই শস্যে নাইট্রোজেন জোগান দিতে এবং অন্যান্য শস্যের শিকড়গ্রন্থিতে নাইট্রোজেন জোগান দিতে কোবাল্ট কাজে লাগে। উদ্ভিদে নাইট্রোজেন আত্মীকরণের ক্ষেত্রে কোবাল্টের চাহিদা অনেক বেশি। কোবাল্টের অভাব ঘটলে উদ্ভিদে নাইট্রোজেনের অভাব দেখা দেয়।
Comments
Post a Comment