বেগুন,জমি ও মাটি,জাত

জমি ও মাটি

উঁচু বা মাঝারি জমি সব চেয়ে উপযুক্ত। তবে সব ধরনের মাটিতে বেগুনের চাষ করা যায়। মাটির অম্লত্ব ৫.৫ – ৬-এর মধ্যে হলে সব থেকে ভাল।

জাত

উন্নত জাত

গ্রীষ্মকালীন ও বর্ষাকালীন - পুসা ক্রান্তি, পুসা পারপল ক্লাস্টার, পুসা পারপল লং, পুসা অনুপম ইত্যাদি।
শীতকালীন - মুক্ত কেশী, কৃষ্ণনগর গ্রিন লং, কৃষ্ণা, চিত্রা, পুসা ক্রান্তি ইত্যাদি।

হাইব্রিড

পুসা আনমল, পুসা হাইব্রিড – ৬, রজনী, সৌরভ, সুচিত্রা, সুপ্রিয়া, এমএইচ বি – ১০, ৫৬ ইত্যাদি।

বীজবৃত্তান্ত

বীজ বোনার সময়

গ্রীষ্মকালীন -- পৌষ–মাঘ।
বর্ষাকালীন -- চৈত্র–বৈশাখ।
শীতকালীন -– ভাদ্র।
হাইব্রিড -– মাঘ-আষাঢ়।

বীজের পরিমাণ (হেক্টর প্রতি )

উন্নত জাত -- ৪৫০ – ৫০০ গ্রাম।
হাইব্রিড জাত -- ২০০ গ্রাম।

বীজ শোধন

বীজবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বীজ শোধন অবশ্যই করতে হবে। অথবা ৩ গ্রাম আইরাম বা ক্যাপটান বা ম্যানকোজের জাতীয় রাসায়নিক ওষুধ প্রতি লিটার জলে গুলে অন্তত ১০ মিনিট ভিজিয়ে তার পর ছায়ায় শুকিয়ে বীজ বুনতে হবে। এ ছাড়াও জৈবজাত ওষুধ ট্রাইকোডারমা ভিরিডি প্রতি ১০০ গ্রাম বীজের জন্য ২ গ্রাম হারে ভালো ভাবে মিশিয়ে বীজ শোধন করা যায়।
এ ছাড়া জৈবজাত ওষুধ ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ৪–৫ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ভালো ভাবে মিশিয়ে বীজ শোধন করা যায়।

বীজতলায় মাটি শোধন

৩ মি x ১ মি বীজতলার জন্য ২০ মিলি ফরম্যালিন ৪০% ১০ লিটার জলে মিশিয়ে সমান ভাবে ১০ সেমি পর্যন্ত মাটিতে ভিজিয়ে দিতে হবে। তার পর বীজতলা ২ দিন চট বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এর ৩–৪ দিন পর বীজ বোনা যাবে। এ ছাড়াও মাটির পোকা ও পিঁপড়ের জন্য বীজতলায় ৫০ গ্রাম ক্লোরোপাইরিফস ৫% গুঁড়ো প্রতিটি বীজতলায় মাটির সঙ্গে ভালো ভাবে মেশাতে হবে। সাথে সাথে বীজ বোনার ৭ দিন আগে প্রতি বর্গমিটারে ৫ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড অথবা ২ গ্রাম ক্যাপটাফ প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ফলনবৃত্তান্ত

বীজতলায় চারা শোধন

চারা বের হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে কার্বাডিজম ১ গ্রাম/লিটার অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম/লিটার রাসায়নিক ওষুধ জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া চারা তোলার ৭–১০ দিন আগে দানাদার রাসায়নিক কীটনাশক যেমন কার্বোফিউরান ৩% বা কার্বাপ ৪% জি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। জৈবজাতীয় ওষুধ ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ৪–৫ গ্রাম/লিটার জলে গুলে শিকড় ডুবিয়ে চারা লাগানো যায়।
চারা লাগানোর সময়
৪ – ৬ সপ্তাহের পর চারা লাগাতে হবে।
চারা রোপনের দূরত্ব
উন্নত জাত
গ্রীষ্মকালীন - ৬০ সেমি x ৬০ সেমি।
বর্ষাকালীন – ৭৫ সেমি x ৬০ সেমি।
শীতকালীন - ৯০ সেমি x ৭৫ সেমি।
হাইব্রিড
গ্রীষ্মকালীন - ৪৫ সেমি x ৪৫ সেমি।
বর্ষাকালীন – ৬০ সেমি x ৬০ সেমি।
শীতকালীন - ৭৫ সেমি x ৬০ সেমি
বসন্তকালীন - ৪৫ সেমি x ৪৫ সেমি।

মূল জমিতে সার প্রয়োগ (হেক্টর প্রতি)

কম্পোস্ট সার – ১৫ টন
গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময়ে — না : ফ : প : ৫০ : ৫০ : ৫০ কেজি
শীতের সময়ে — না : ফ : প : ৪০ : ৪০ : ৪০ কেজি
হাইব্রিড — না : ফ : প : ৯০ : ১০০ : ১০০ কেজি
এ ছাড়া চাপান সার হিসাবে উন্নত জাতের চারা লাগানোর ২১ দিন ও ৩৫ দিন পর ২৫ কেজি হারে নাইট্রোজেন/হেক্টরে প্রয়োগ করতে হবে। গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময়ে, শীতকালীন সময়ে চারা লাগানোর ২১ দিন ও ৪২ দিন পর ৪৫ কেজি হারে নাইট্রোজেন প্রতি হেক্টরে প্রয়োগ করতে হবে।
উল্লেখ থাকে যে, চাপান সার হিসাবে নাইট্রোজেন জাতীয় সারের মধ্যে ক্যান অথবা অ্যামোনিয়া সালফেট সার প্রয়োগ বেশি কার্যকর।

ফসল তোলার সময়

উন্তত জাতের ক্ষেত্রে ৭৫ – ৮০ দিন পর প্রথম ফসল তোলা যায়।
হাইব্রিড জাতের ক্ষেত্রে ৫০ – ৬০ দিনের পরে প্রথম ফল তোলা যায়।

সম্ভাব্য ফলন (হেক্টর প্রতি)

গ্রীষ্ণ ও বর্ষায় -- ১৫–২৫ টন।
শীতে -- ৩০–৩৫ টন।
হাইব্রিড -- ৩০–৩৫ টন।

ছিদ্রকারী পোকা

ফল, ডগা ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা

কজাল অরগানিজম – লিউসিনোডেস ওরবানোলিস

লক্ষণ

পোকার কিড়া/লেদা গাছের ডগা ও ফলের মধ্য ফুটো করে প্রবেশ করে ও খেতে শুরু করে। ফলে আক্রান্ত ডগা শুকিয়ে যায় আর গাছ ঝিমিয়ে পড়ে আর ফল পচে যায়। এই পোকার আক্রমণ বছরের সব সময়ে পরিলক্ষিত হয়, তবে বর্ষার সময়ে প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।

প্রতিকার

রাসায়নিক ওষুধ ব্যবহার করলে মনোক্রোটাফস ৩৬% ১.৫ মিলি বা কারটাপ ৫০% ১ গ্রাম বা অ্যাসেকট ৭৫% ০.৭৫ গ্রাম বা কার্বোসালফান ২৫% (২ মিলি), ট্রাইয়াজোকস ৪০% বা প্রফিজোকস ৫০% ১ মিলি, ফিপ্রোলিন ৫% ১ মিলি, ল্যাম্বাডাসায়া হ্যালোথ্রিন ৫% ০.৫ মিলি ইত্যাদি যে কোনও একটি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। কোনও রাসায়নিক ওষুধ পর পর ২–৩ বার স্প্রে করা উচিত নয়। প্রতি ক্ষেত্রে রাসায়নিক গ্রুপ পাল্টাতে হবে।
এ ছাড়া, জৈব কীটনাশকের মধ্যে বিটি (ক) প্রতি লিটার জলে ১ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করা যায়। নিমজাত জৈব রসায়ন ৫০০০ পি. পি. এম. ২ – ৩ মিলি/লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।

কাণ্ড ছিদ্রকারী মাজরা পোকা

কজাল অরগানিজম – ইউজোফেরা পার্টিসেল্লা

লক্ষণ

সাদাটে কিড়া কাণ্ড ছিদ্র করে ভিতরের অংশ খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত অংশ ঝিমিয়ে পড়ে ও শুকিয়ে যায়, চারা অবস্থায় আক্রমণ হলে গাছ মারা যায়।

প্রতিকার

ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকার ন্যায়।

ঝাঁঝরা পোকা ও শোষক পোকা

বাঘা পোকা বা পাতা ঝাঁঝরা পোকা

কজাল অরগানিজম – এপিলাখনা ভিজিনটিওকটো পাঙ্কাটাটা

লক্ষণ

বাদামি কিড়ার গায়ে কাঁটা থাকে এবং কালচে লাল রঙের পূর্ণাঙ্গ পোকার গায়ে কালো কালো দাগ থাকে। পূর্ণাঙ্গ এবং অপূর্ণাঙ্গ (গ্রাব) দুই দশাতে ক্ষতি করলেও গ্রাব অবস্থায় ক্ষতি বেশি করে। পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতা ঝাঁঝরা করে দেয়। সাধারণত ফুল ধরার আগেই আক্রমণের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।

প্রতিকার

কার্বারিল ৫০% ২.৫ গ্রাম বা আয়োডাকার্ব ৭৫% ১ গ্রাম বা ডাউক্লোরোওস ৭৬% ০.৭৫ মিলি, ম্যালাথিয়ন ৫০% ২.০ মিলি জাতীয় রাসায়নিক ওষুধ প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
এ ছাড়াও নিমজাত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

সবুজ শোষক পোকা

কজাল অরগানিজম – আমরাসিয়া বিগুত্তুলা ও হিশিমোনাস ফাইসিটিস

লক্ষণ

পূর্ণাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ (গ্রাব) উভয় দশাতেই এরা পাতার রস চুষে খায়। আক্রান্ত পাতার কিনারা বরাবর হলুদ হয়ে যায়। সাধারণত মার্চ থেকে জুলাই মাসের মধ্যে প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।

প্রতিকার

রাসায়নিক ওষুধের মধ্যে মনোক্রোটোফস ৩৬% ১.৫ মিলি বা ফিপ্রোনিল ৫% ১ মিলি বা ডাইমিথোয়েট ৩০% ২ মিলি বা মিথাইল ডিমেটন ২৫% ২ মিলি বা অ্যাসিফেট ৭৫% ০।৭৫ গ্রাম বা ডেল্টামোথ্রিন + টাইজোফস ১.৫ মিলি বা ইমিডাক্লো ১৭.৮% ১- ০.৭৫ মিলি ইত্যাদি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

অন্যান্য পোকা

সাদা মাছি

কজাল অরগানিজম – বেনিসিয়া টাবিসাই

লক্ষণ

পূর্ণাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ পোকা গাছের রস শুষে খায়। ফলে আক্রান্ত অংশ হলদেটে হয়ে কুঁকুড়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

প্রতিকার

সবুজ শোষক পোকার ক্ষেত্রে যে ভাবে রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়, এ ক্ষেত্রেও সে ভাবে।
এ ছাড়া জৈবিক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি গাছে ২টি করে ক্রাইসোপারলার গ্রাব ছাড়তে হবে। এ ছাড়া নিমজাত ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

দুয়ে পোকা

কজাল অরগানিজম – ব্রেভেনিয়া রেহি

লক্ষণ

নরম ও সাদা তুলোর মতো দেখতে এই পোকা পাতার নীচের দিকে এবং শাখা-প্রশাখাতে দেখা যায়। এরা রস চুষে খায়। আক্রান্ত পাতা হলদেটে হয় এবং গাছ দুর্বল হয়ে যায়।

প্রতিকার

রাসায়নিক ওষুধ হিসাবে মনোক্রোটোফস ৩৬% ১.৫ মিলি বা ফিপ্রোলিন ৫% ১ মিলি বা ডাইমিফেয়েট ৩০% ২ মিলি বা অ্যাসিফেট ৭৫% ০.৭৫ গ্রাম বা ম্যালাইথয়ন ৫০% ২ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
এ ছাড়া জৈবজাত নিমঘটিত কীটনাশক ৫০০০ পি পি এস ৩০০ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে ৫ দিন অন্তর ২ – ৩ বার স্প্রে করলে আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

লাল মাকড়

কজাল অরগানিজম – টেটরানাইকাস লুডেনি

লক্ষণ

সাধারণত গ্রীষ্মকালে এদের আক্রমণের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। হালকা জালের মধ্যে খুব ছোট ছোট লাল রঙের মাকড় পাতার তলায় থেকে রস চুষে খায়। আক্রান্ত পাতা ফ্যাকাসে ও বিবর্ণ হয়ে যায়।

প্রতিকার

রাসায়নিক ওষুধের মধ্যে সালফার গুঁড়ো ৮০% ৪ গ্রাম বা ফেনাজাকুইন ৫০% বা ইথিয়ন ৫০% ২ মিলি বা প্রিফেনাকস ৫০% 0.75 মিলি ইত্যাদি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

শিকড় ফোলা বা নিমাটোড

কজাল অরগানিজম – মেলোয়ডোজাইনে ইনকগনিটা আর মেলোয়ডোজাইনে জাভানিকা

লক্ষণ

উপরোক্ত দু’টি জাতের নিমাটোডের আক্রমণে এই শিকড় ফোলা প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। পাতা হলুদ হয়ে ওপরে গাছ মরে যায়। পরবর্তীতে শিকড় দিয়ে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়।

প্রতিকার

পরিচর্যাগত বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি। প্রথমত, টমেটো, লঙ্কা, বেগুন ও কুমড়ো জাতীয় সবজি চাষ করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, নিমখইল জমিতে ব্যবহার করা প্রয়োজন। তৃতীয়ত, দানাদার কীটনাশক ৩% ৪৫ কেজি/হেক্টের প্রয়োগ করা যেতে পারে।

Comments