- Get link
- X
- Other Apps
টমেটো
- জমি-জাত
- টমেটো চাষে কী ধরনের জমি প্রয়োজন ও কোন কোন জাতের টমেটো হয়, এখানে সেই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
- বীজবৃত্তান্ত
- বীজ বোনার সময়, বীজের পরিমাণ, বীজ শোধন ও বীজতলায় মাটি শোধনের পদ্ধতি নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
- ফলনবৃত্তান্ত
- বীজতলায় চারা শোধনের পদ্ধতি, চারা লাগানোর সময়, সারের পরিমাণ, ফসল তোলার সময় ইত্যাদি নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
- পোকা নিয়ন্ত্রণ
- কোন ধরনের পোকা কী ভাবে ঠেকানো যায় সে সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে এখানে।
- রোগ নিয়ন্ত্রণ
- কোন ধরনের রোগ কী ভাবে ঠেকানো যায় সে সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে এখানে।
জমি ও মাটি
জল নিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত বেলে, দো–আঁশ থেকে এঁটেল মাটিতে টমেটোর চাষ করা যায়। মাটির অম্লত্ব ৬–৭-এর মধ্যে হলে সব থেকে উপযোগী হয়।জাত
উন্নত জাত
জলদি জাত — পুষা রুবি, পুষা আর্লি ডোয়ার্ফ, বেস্ট অফ অল ইত্যাদি।নাবি জাত — পুষা গৌরব, পাঞ্জাব কেশরী, কৃষ্ণনগর সিলেকশন–২০, এস–১২, এস–১২০, রমা ইত্যাদি।হাইব্রিড
জলদি জাত — রজনী, রশ্মি, সদাবাহার, রুপালী ইত্যাদি।নাবি জাত — নবীন, অবিনাশ–২, মেঘনা, মঙ্গলা, বৈশাখী ইত্যাদি।
বীজবৃত্তান্ত
বীজ বোনার সময়
জলদি জাত — আষাঢ়–শ্রাবণ।
নাবী জাত — কার্তিক–পৌষ।
কিছু হাইব্রিড সারা বছর ধরে করা যায়।
বীজের পরিমাণ (হেক্টর প্রতি)
উন্নত জাত ৪০০ – ৫০০ গ্রাম।
হাইব্রিড জাত ১০০ – ১৫০ গ্রাম।
বীজ শোধন
বীজবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বীজ শোধন প্রয়োজন। বীজ বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের জন্য ২৮এম কাঠাডেজিম অথবা ৩ গ্রাম থাইরকম/ক্যাপটান/ম্যানকোজের জাতীয় রাসায়নিক ওষুধ প্রতি লিটার জলে গুলে অন্তত ১০ মিনিট ভিজিয়ে তারপর ছায়ায় শুকিয়ে বীজ বুনতে হবে।
এ ছাড়া জৈবজাত ওষুধ ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ৪–৫ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ভালো ভাবে মিশিয়ে বীজ শোধন করা যায়।
বীজতলায় মাটি শোধন
৩ মি x ১ মি বীজতলার জন্য ২০ মিলি ফরম্যালিন ৪০% ১০ লিটার জলে মিশিয়ে সমান ভাবে ১০ সেমি পর্যন্ত মাটিতে ভিজিয়ে দিতে হবে। তার পর বীজতলা ২ দিন চট বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এর ৩–৪ দিন পর বীজ বোনা যাবে। এ ছাড়াও মাটির পোকা ও পিঁপড়ের জন্য বীজতলায় ৫০ গ্রাম ক্লোরোপাইরিন ৫% গুঁড়ো প্রতিটি বীজতলায় মাটির সঙ্গে ভালো ভাবে মেশাতে হবে। সাথে সাথে বীজ বোনার ৭ দিন আগে প্রতি বর্গমিটারে ৫ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড অথবা ২৮এম ক্যাপটাফ প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
এ ছাড়া জৈবজাত ঔষধি ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ১ কেজি প্রতি ১০ কেজি খোলের সঙ্গে মিশিয়ে মাটিতে মেশানো যায়।
ফলনবৃত্তান্ত
বীজতলায় চারা শোধন
চারা বের হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে কার্বাডিজম ১ গ্রাম/লিটার অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম/লিটার রাসায়নিক ওষুধ জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া চারা তোলার ৭–১০ দিন আগে দানাদার জাতীয় রাসায়নিক কীট নাশক যেমন কার্বোকুরুপ ৩% বা কারটাপ ৪% জি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। জৈবজাতীয় ওষুধ ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ৪–৫ গ্রাম/লিটার জলে গুলে ওই মিশ্রণে শিকড় ভিজিয়ে নিয়ে চারা লাগানো যায়।
চারা লাগানোর সময়
৪–৫ সপ্তাহের চারা উপযুক্ত হয় রোয়ার জন্য।
চারা রোপনের দূরত্ব
জলদি জাতের ক্ষেত্রে ৭৫ সেমি x ৬০ সেমি।
নাবী জাতের ক্ষেত্রে ৭৫ সেমি x ৭৫ সেমি
মূল জমিতে সার প্রয়োগ
উন্নত জাতের জন্য --
প্রতি হেক্টর মূল সার -- না : ফ : প : ৫০ : ৫০ কেজি (হেক্টর প্রতি) এবং চাপান সার চারা লাগানোর ২১ দিন ও ৪২ দিন পর ৫ না. ২৫ কেজি।
হাইব্রিড জাতের জন্য --
প্রতি হেক্টর মূল সার না : ফ : প : ৯০ : ৯০ কেজি এবং চাপান সার হিসাবে চারা লাগানর ২১ দিন ও ৪২ দিন পর না : ৯০ কেজি।
ফসল তোলার সময়
চারা লাগানোর ৭৫–৮০ দিন পর প্রথম ফসল তোলা যায়।
সম্ভাব্য ফলন (হেক্টর প্রতি)
উন্নত জাত – ২৫–৩০ টন।
হাইব্রিড জাত – ৬০–৮০ টন।
পোকা নিয়ন্ত্রণ
ফল ছিদ্রকারী পোকা
কজাল অরগানিজম – হেলিকভারপা ওরমিগেরা/স্পোডোপটেরা লোটুরা
লক্ষণ
ফল ধরার সময় থেকে এই পোকার লোদা, সবুজ বা মেটে, বাদামি রঙের এবং গায়ে ডোরা দাগ আছে। এরা প্রথমে পাতা খায় পরে ফলের মাথা থেকে ঢুকে ভেতরের অংশ খেয়ে নষ্ট করে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্য এর প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।
প্রতিকার
ক্ষেতের চার পাশে গাঁদা ফুলের গাছ প্রতি ১৪–১৬টি রোয়ার মাঝে ফাঁদ ফসল হিসাবে লাগানো যায়। এ ছাড়াও, কেরোমন ফাঁদ পাতা যায়। আর এন. পি. ডি. (হলিমাইড) ১ মিলি/লি জলে গুলে স্প্রে করা যেতে পারে। রাসায়নিক কীটনাশক হিসাবে। এডোসালফান, কুইনালথাস, সাইপার মেট্রিন, স্পিনোগড, থায়োডাকার্ব, বানিমজাতক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাঘা পোকা
কজাল অরগানিজম – এপিটাকরা- ভিজিনটিওকটো পাঙ্কাটাটা
লক্ষণ
অক্টোবর–নভেম্বর বা মার্চ–এপ্রিলে এই পোকার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। এরা পাতা খেয়ে ঝাঁঝরা করে দেয়।
প্রতিকার
বেগুনের মতো। কার্বারিল ৫০% ২.৫ গ্রাম বা আয়োডাকার্ব ৭৫% ১ গ্রাম বা ডাউক্লোরোওস ৭৬% ০.৭৫ মিলি, ম্যালাথিয়ন ৫০% ২.০ মিলি জাতীয় রাসায়নিক ওষুধ প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
নালী পোকা বা ম্যাপ পোকা
কজাল অরগানিজম - লিরিওমিজা – ট্রিফোলি
লক্ষণ
গ্রীষ্মকালে এর প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। হলুদ বা সাদা রঙের পোকা পাতার দু’ ত্বকের মাঝে সুড়ঙ্গ সৃষ্টি করে তার মধ্য থেকে সবুজ অংশ খেতে খেতে এগোয় ও শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত পাতা ওপর থেকে দেখলে জালের বা ম্যাপের মতো মনে হয়।
প্রতিকার
রাসায়নিক ওষুধের মধ্যে মনোক্রটোফস ৩৬% ১.৫ মিলি, ফিপ্রোনিল ৫% ১ মিলি, ডাইমিথোয়েট ৩০% ২ মিলি বা মিথাইল ডেমিটন ২৫% ২.০ মিলি অথবা অ্যামিফেট ৭৫% ০.৭৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করা যাবে।
সাদা মাঝি ও জ্যাসিড
কজাল অরগানিজম - বেমিসিয়া টাবাসি/আমরাসা এসপি
লক্ষণ
অক্টোবর–নভেম্বর বা ফেব্রুয়ারি–এপ্রিলের মধ্যে পোকার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। এরা পাতার নীচে থেকে রস শুষে খায়। পরবর্তীতে পাতা কোকড়ানো রোগের ভাইরাস ছড়ায় ।
প্রতিকার
নালী পোকার মতো।
চারা ঢলে পড়া
কজাল অরগানিজম - পাইথিয়াম আফুইডারমাটাম/ফাইটোপথেরা এসপিপি রিজোকটোরিয়া এসপিপি
লক্ষণ
ছত্রাকজনিত এই রোগ মাটিতে পটাশের অভাবের জন্য ও বালি মাটিতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। পাতা হলদে হয়ে হঠাৎ সতেজ চারা ঢলে পড়ে শুকিয়ে যায়। রোগটি মূলত কাণ্ডের নীচের অংশের মধ্য আবদ্ধ থাকে।
প্রতিকার
উপযুক্ত পরিমাণ জৈবসার ও পটাশ ঘটিত সার প্রয়োগে রোগ কম হয়। এ ছাড়াও বীজ শোধন অবশ্যই করতে হবে। যে কোন একটি রাসায়নিক ওষুধ যেমন ক্যাপটান ৫০% / আইরাম ৮০% ডব্লুপি / কার্বাডোজিম ৫০% ডব্লুপি ইত্যাদির যে কোনও একটি পরিমাণমতো জলে গুলে তাতে বীজ দশ মিনিট জলে ভিজিয়ে রেখে তার পর ছায়ায় জল ঝরিয়ে নিয়ে ওই দিন তা বীজতলায় বোনা উচিত। এ ছাড়াও, জৈবঘটিত ছত্রাক নাশক ওষুধ যেমন সিউডোমনাস ফ্লুরোসেন্স ৫৮ গ্রাম/কেজি বীজে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ৮ গ্রাম/কেজি বীজে মিশিয়েও বীজ শোধন করা যায়।
আর রোগের আক্রমণ প্রতিরোধে বীজ তলায় ক্যাপটান ৫০% ডব্লুপি ২.৫ গ্রাম জলে গুলে ভালো ভাবে বীজতলায় ভিজিয়ে দিতে হবে।
ব্যাকটেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ
কজাল অরগানিজম – এমএলও মাইকোপ্লাজমা ঘটিত রোগ
লক্ষণ
বেগুনের মতো। প্রথমে কচি পাতা ফ্যাকাশে হলুদ হয়ে যায়। বড় পাতার কোলে এক গুচ্ছ ছোট পাতা দেখা যায়। গোটা গাছে মাথায় ভীষণ ছোট ছোট পাতায় ভরে যায়। গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং আক্রান্ত গাছে ফুল ফল প্রায় ধরেই না। এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে গাছের ডগা ঝিমিয়ে যায়। সমস্ত গাছ হঠাৎ ঢলে পড়ে পাতা ঝরে যায়।
প্রতিকার
রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগ করে এই রোগকে কমানো যায় না। প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে আক্রান্ত জমিতে ২–৩ বছর বেগুন, টমেটো, আলু, লঙ্কা চাষ বন্ধ করে শিম জাতীয় ফসলের চাষ করতে হবে। সহনশীল জাতের চাষ করতে হবে। এ ছাড়াও বেগুনের ন্যায় রাসায়নিক ওষুধে বীজ শোধন করতে হবে। চারা লাগানোর আগে ১৫ কেজি/হেক্টর ব্লিচিং পাউডার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়াও জৈবজাত কীটনাশক ইসউডমনাস ফ্লুরোসেন্স প্রয়োগ করতে হবে।
নাবী ধসা
কজাল অরগানিজম – ফাইটোথোরা ইনফেসটার্স
লক্ষণ
ছত্রাকজনিত রোগের লক্ষণ প্রথমে গাছের পাতার ধারে বিশেষ, করে নীচের দিকের পাতায় বাদামি বা কালচে বর্ণের ভিজে ভিজে দাগ হয়ে পাতা শুকিয়ে যায়। সবুজ ফলেও এই ধরনের দাগ দেখা যায়। কুয়াশা ও ভিজে আবহাওয়া থাকলে আক্রমণের প্রাদুর্ভাব দ্রুত হয়। এর ফলে গাছ দ্রুত শুকিয়ে যা ও ফলও পচে যায়।
প্রতিকার
কুয়াশা বেশি হলে বা বৃষ্টি হলে রাসায়নিক ওষুধ যেমন ম্যাঙ্কোজেব ৭৫ ডব্লুপি ২ গ্রাম বা কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০% ডব্লুপি ৪ গ্রাম বা ম্যাঙ্কোজেব ৫০ – ৬০ ডব্লুজি ৪–৫ গ্রাম বা ম্যাটাইলসল ৮৬ + ম্যাঙ্কোজেব ৬৪% ডব্লুপি ২.৫৪ গ্রাম বা ক্যাপটান ৫০% ডব্লুপি ৪ গ্রাম বা এই জাতীয় অন্যান্য রাসায়নিক ওষুধ ১০–১৫ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে আক্রমণের তীব্রতা ও আবহাওয়ার পরিস্থিতি অনুযায়ী।
জলদি ধসা
লক্ষণ
ছত্রাকজনিত এই রোগের আক্রমণে গাছের পাতায় বাদামি গোলাকার দাগ হয়। দাগের মাঝে চক্রাকার সরু রেখা দেখা যায়। এই দাগ কাণ্ড বা ফলেও দেখা যেতে পারে। ফলে গাছ শুকিয়ে যায় ও ফল পচে যায়।
প্রতিকার
নাবী ধসার মতো।
অন্যান্য রোগ
পাতা কোঁচকানো বা মোজাইক ভাইরাস
লক্ষণ
জলদি ফসলে এই রোগের প্রকোপ বেশি হয়। পাতায় ফুটো, কোঁচকানো, দাগ ধরা পাতাগুলি ভাইরাস আক্রান্ত। প্রধানত সাদা মাছি ও শ্যামা পোকার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত গাছের ডালপালা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হয়। ফুল, ফল ঠিকমতো ধরে না, ফলনও কমে যায়।
প্রতিকার
বীজতলায় ও চারা রোপনের সময় দানাদার জাতীয় রাসায়নিক কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে পুড়িয়ে দিতে হবে। তা ছাড়াও রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য বাহক পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাইমিথোয়েট ৩০% ইসি, ১.৫ মিলি বা ইমিডাক্লোপিড ১৭.৮% এস এল ১/০.৭৫ মিলি ইত্যাদি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
তুলসী রোগ
কজাল অরগানিজম – তামাক পাতার জেমিনি ভাইরাস
লক্ষণ
এই রোগে গাছের পাতা ছোট ছোট হয়ে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফুল–ফল ধরে না। বাহক পোকার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়।
প্রতিকার
বাহক পোকা দমনের/নিয়ন্ত্রণের জন্য মোজাইক ভাইরাস রোগের মতো রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
Comments
Post a Comment