পঞ্চগব্য

পঞ্চগব্য 

গরুর বর্জ্য ও দুধের নানা পণ্য দিয়ে তৈরি হয় পঞ্চগব্য।
প্রস্তুত প্রণালী 
পঞ্চগব্য কী ভাবে তৈরি করতে হয়, তা বিশদে জানানো হয়েছে এখানে।
প্রয়োগের মাত্রা 
কতটা পঞ্চগব্য কী ভাবে কতটা প্রয়োগ করতে হয়, তার কিছু নীতি নিয়ম আছে। সে সব এখানে বলা হয়েছে
প্রয়োগের সময়কাল 
কত দিন অন্তর স্প্রে করা উচিত, কোন শস্যে কোন সময়ে পঞ্চগব্য প্রয়োগ করতে হয় তা জানানো হয়েছে এখানে।

পঞ্চগব্য

পঞ্চগব্য কী ?

পঞ্চগব্য একটি জৈব উপাদান। উদ্ভিদ জগতে এটি বৃদ্ধির সহায়ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে ন’টি উপাদান আছে, গরুর গোবর, গোমূত্র, গরুর দুধ, গরুর দুধের দই, গুড়, গব্য ঘি, কলা, ডাবের জল ও জল। ঠিকমতো মেশানো ও ব্যবহার করা হলে, এতে দারুণ কাজ হয়।

প্রস্তুত প্রণালী

পঞ্চগব্য কী ভাবে তৈরি করা হয়?

গরুর গোবর:৭ কিলো
গব্য ঘি:১ কিলো
সকালে ও বিকেলে এই দু’টি উপাদানকে ভালো ভাবে মিশিয়ে ৩ দিন রেখে দিতে হবে।
গোমূত্র:১০ লিটার
জল:১০ লিটার
৩ দিন পর থেকে পরবর্তী ১৫ দিন দু’বেলা গোমূত্র ও জল মেশাতে হবে। ১৫ দিন ধরে মিশ্রণ প্রক্রিয়া চলার পর এর সঙ্গে নিম্নলিখিত দ্রব্যগুলি মেশাতে হবে। ৩০ দিন পর পঞ্চগব্য তৈরি হয়ে যাবে।
গরুর দুধ:৩ লিটার
গরুর দুধের দই :২ লিটার
ডাবের জল:৩ লিটার
গুড়:৩ কিলো
১২টি পাকা কলা
ওপরের সবক’টি দ্রব্য বড়মুখওয়ালা মাটির পাত্র, কংক্রিটের ট্যাঙ্ক অথবা প্লাস্টিক পাত্রে পরপর মেশাতে হবে। পাত্রটিকে ছাউনির নীচে খোলা অবস্থায় রাখতে হবে। মিশ্রণটিকে সকালে ও বিকেলে দিনে দু’বার নাড়াতে হবে। ৩০ দিনে পঞ্চগব্য তৈরি হয়ে যাবে (মহিষের দুধের পণ্য মেশানো চলবে না। বাইরে থেকে আসা গরুর তুলনায় দেশীয় গরুর দুধের পণ্য বেশি কার্যকর বলে প্রমাণিত) । এই মিশ্রণকে ছাউনির নীচে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে মশা ও অন্যান্য পতঙ্গ এতে ডিম না পাড়তে পারে। যদি আখের রস না পাওয়া যায়, তা হলে ৩ লিটার জলে ৫০০ গ্রাম গুড় মিশিয়ে মিশ্রণে দিতে হবে।   

প্রয়োগের মাত্রা

  1. স্প্রে করার পদ্ধতি
  2. সেচের জলে
  3. বীজ পরিচর্যা
  4. বীজ সংরক্ষণ

স্প্রে করার পদ্ধতি

৩ শতাংশ দ্রবণ সবচেয়ে কার্যকর বলে দেখা গেছে। ১০০ লিটার জলে ৩ লিটার পঞ্চগব্য যে কোনও শস্যের পক্ষে আদর্শ। ১০ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার স্প্রেয়ারে প্রতি ট্যাঙ্কে ৩০০ মিলি পঞ্চগব্য লাগবে। পাওয়ার স্প্রেয়ার ব্যবহার করলে গুঁডো গুঁড়ো পদার্থগুলিকে ছেঁকে নিতে হবে। হাতে চালানো স্প্রেয়ার ব্যবহার করলে বড় বড় ফুটোর নজল ব্যবহার করতে হবে।

সেচের জলে

প্রতি হেক্টর জমিতে সেচের জলের সঙ্গে ৫০ লিটার পঞ্চগব্য মিশিয়ে দিন। সেচের যে কোনও পদ্ধতিতেই পঞ্চগব্য ব্যবহার করা যায়।

বীজ পরিচর্যা

পোঁতার আগে বীজ বা চারাগাছ ৩ শতাংশ পঞ্চগব্যের দ্রবণে ভিজিয়ে নিন। বীজ ভেজানোর জন্য ২০ মিনিট সময় যথেষ্ট। হলুদ, আদা, আখের ক্ষেত্রে ৩০ মিনিট ভেজানো দরকার।

বীজ সংরক্ষণ

শোকানো ও সংরক্ষণের বীজ ৩ শতাংশ পঞ্চগব্যের দ্রবণে ভিজিয়ে নিন।

স্প্রে করার সময়

ফুল ফোটার আগে
১৫ দিনে এক বার, শস্য হতে যতদিন সময় লাগবেতার ভিত্তিতে ২ বার স্প্রে করতে হবে
ফুল ফোটা ও শুঁটি ধরার সময়
১০ দিনে এক বার২ বার স্প্রে
ফল/শুঁটি পরিণত হওয়ার সময়
শুঁটির পরিণতি লাভের সময় এক বার                                                                                                                                                                      

বিভিন্ন শস্যে পঞ্চগব্য প্রয়োগের সময়

শস্য
সময়
ধান
চারা রোপণের ১০,১৫,৩০ এবং ৫০ তম দিনে
সূর্যমুখী
বীজ বপনের ৩০,৪৫ এবং ৬০ তম দিনে
কালো মুগ
বৃষ্টিসেবিত জমিতে ফুল ফোটার সময় এবং ফুল ফোঁটার ১৫ দিনের মাথায়
সেচসেবিত জমিতেবীজ পোঁতার ১৫২৫ এবং ৪০ দিন পর
সবুজ মুগ
বীজ পোঁতার ১৫২৫৩০৪০ ও ৫০ দিন পর
রেড়ি
বীজ পোঁতার ৩০ ও ৪৫ দিন পর
বাদাম
বীজ পোঁতার ২৫ ও ৩০ দিন পর
ঢ্যাঁড়শ
বীজ পোঁতার ৩০৪৫৬০ ও ৭৫ দিন পর
মরিঙ্গা
ফুল ফোটার আগে ও শুঁটি তৈরির সময়
টম্যাটো
চারা গজানোর সময় এবং রোপণের ৪০ দিন পর১ শতাংশ পঞ্চগব্য দিয়ে ১২ ঘণ্টা বীজ পরিচর্যা
পেঁয়াজ
রোপণের দিন এবং ৪৫ ও ৬০ দিন পর
গোলাপ
ডালপালা ছাঁটা ও কুঁড়ি ফোঁটার সময়