খামার বর্জ্য থেকে সার, সার তৈরির পদ্ধতি

খামার বর্জ্য থেকে সার

খামার বর্জ্য থেকে কমপোস্ট 
নানা ধরনের খামার-বর্জ্য আছে। সেই খামার বর্জ্য পচিয়ে যে জৈব উপাদান পাওয়া যায়, তা-ই হল কমপোস্ট।
সার তৈরির পদ্ধতি 
এখানে তিনটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।
চাই বর্জ্য রক্ষণাবেক্ষণে উন্নত মান 
পশুপালন শিল্পে বর্জ্য রক্ষণাবেক্ষণে উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করলে আরও বেশি সার উৎপন্ন করা যাবে এবং দূষণও কমবে।



  1. ইন্দোর পদ্ধতি
  2. ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি
  3. কোয়েম্বাটোর পদ্ধতি

ইন্দোর পদ্ধতি

জৈব বর্জ্য গোয়ালে বিছানার মতো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মূত্রে ভেজা সেই বর্জ্য এবং গোবর প্রতি দিন সরিয়ে আনা হয় এবং ১৫ সেমি পুরু স্তর তৈরি করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। মূত্রে ভেজা মাটি গোয়াল থেকে সংগ্রহ করে জলে ভেজানো হয় এবং দিনে দু-তিনবার ওই বর্জ্যের স্তরের ওপর চাপানো হয়। এই প্রক্রিয়া প্রায় দিন পনেরো চলে। তার পর খুব ভাল মানের কমপোস্ট সার বর্জ্যের স্তরের ওপর চাপানো হয় এবং গোটা উপাদানটিকে উল্টেপাল্টে দেওয়া হয়। পুরনো সার গোটা উপাদানটিকে পচাতে সাহায্য করে। গোটা উপাদানকে পরবর্তী ১ মাস একই ভাবে রেখে দেওয়া হয়। তত দিনে এই সার পুরোপুরি আর্দ্র হয়ে যায়। এই সার আরও এক বার উল্টেপাল্টে দেওয়া হয়। আরও এক মাসের মধ্যে নতুন সার ব্যবহারের উপযুক্ত হয়ে ওঠে।


ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি

২৫ সেন্টিমিটার পুরু শুকনো বর্জ্য পদার্থ একটি গর্তে ছড়িয়ে রাখা হয়, তার ওপর জলে ভেজা থকথকে গোবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় ভেজানোর জন্য। ভিজে স্তরের উপর শুকনো বর্জ্যের আরও একটি স্তর চাপিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে শুকনো বর্জ্যের স্তর, তার উপর গরুর গোবরের দ্রবণ, এই ভাবে স্তরে স্তরে গর্তটি মাটির উপর ০.৫ মিটার পর্যন্ত ভরাট করা হয়। এই অবস্থায় কোনও ঢাকা না দিয়ে ১৫ দিন রাখা হয়। এর পর এই উপাদান উল্টেপাল্টে তুলে কাদা মাখিয়ে ৫ মাস বা যত দিন না ব্যবহার হচ্ছে ,তত দিন একই ভাবে রেখে দেওয়া হয়।

কোয়েম্বাটোর পদ্ধতি

কী ধরনের বর্জ্য পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে তার ভিত্তিতে নানা মাপের গর্তে সার প্রস্তুত করা হয়। প্রথমে গর্তে বর্জ্য পদার্থের একটি স্তর বানানো হয় , তার উপর আড়াই থেকে ৫ লিটার জলে ৫ থেকে ১০ কিলো গরুর গোবরের দ্রবণ ও ০.৫ থেকে ১ কিলো হাড়ের গুঁড়োর মিশ্রণ সমান ভাবে ছড়ানো হয়। এ ভাবে একের পর এক স্তর তৈরি করা হয়, যতক্ষণ না উপাদানের উচ্চতা মাটির থেকে ০.৭৫ মিটার পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে। এর পর এটিকে কাদামাটি দিয়ে মুড়িয়ে একই ভাবে ৮-১০ সপ্তাহ রেখে দেওয়া হয়। তার পর পুরো পদার্থটি তুলে জলে ভিজিয়ে উল্টেপাল্টে আয়তাকার স্তুপ বানিয়ে , যত দিন না ব্যবহার হচ্ছে, ছায়ায় রেখে দেওয়া হয়।
কোয়েম্বাটোর পদ্ধতিতে প্রথমে অবাত পচন প্রক্রিয়া তারপর সবাত পচন প্রক্রিয়া চলে। এটি ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতির বিপরীত। কোয়েম্বাটোর বা ইন্দোর পদ্ধতির মতো ব্যাঙ্গালোর প্রক্রিয়ায় সার পচানো হয় না। কিন্তু এটাই সবচেয়ে ভারী।




















































চাই বর্জ্য রক্ষণাবেক্ষণে উন্নত মান

  1. খামার-বর্জ্যের রক্ষণাবেক্ষণ
  2. উৎসঃ

খামার-বর্জ্যের রক্ষণাবেক্ষণ

যেখানে জন্তু জানোয়ার আছে, সেখানে তাদের বর্জ্যও আছে। পশুপালন শিল্পের চেহারা নেওয়ার পর থেকে পশুপালনের খামার যত বেড়েছে, তার তুলনায় বহু বহু গুণ বেড়েছে খামারে পশুর সংখ্যা। এর ফলে খুব ছোট জায়গাতেও প্রচুর পরিমাণে পশু বর্জ্য পাওয়া যায়। যখন এক জায়গায় প্রচুর পরিমাণে পশু বর্জ্য তৈরি হয়, তখন তাকে নিরাপদে ও কম খরচে কার্যকর ভাবে ব্যবহার করাও মুশকিল, ফেলে দেওয়াও কঠিন। সরকারি নিয়মনীতি এবং উন্নত মানের বর্জ্য রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাতে পারে এবং খামারগুলিতে যেন তা প্রয়োগ করা হয়, সে দিকে লক্ষ রাখা উচিত। কিন্তু যত দিন আমরা আমাদের খাদ্যের জন্য ছোট জায়গায় শিল্পের আকারে প্রচুর পশু পালনের ওপর নির্ভর করে থাকব, তত দিন পশু বর্জ্য সংক্রান্ত সমস্যা থেকে যাবে।
যে সব খামারে পশুরা ঘাসের জমিতে চরে বেড়ায়, সেখানে সবটা না হলেও বর্জ্যের অনেকটাই সরাসরি জমিতে যায়, যা সার হিসেবে কাজ করে এবং তার ভেতরে থাকা পরিপোষক পদার্থ চক্রাকারে মাটিতে ফিরে যায়। পশুপালন শিল্প খামারে, পশুরা যেখানে থাকে সেখানেই বর্জ্য ত্যাগ করে। সেখান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করতে হবে, অন্যত্র নিয়ে যেতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে--- প্রতিটি ধাপই পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পশুপালনের জন্য ব্যবহৃত ঘরগুলিকে শুধুমাত্র ধুয়ে পরিষ্কার করতে চাইলে প্রচুর পরিমাণ জলের প্রয়োজন হয়। দুগ্ধ শিল্পের ক্ষেত্রে, যেখানে বর্জ্য ধুয়ে পরিষ্কার করার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকে, সেখানেও গরু পিছু দিনে ১৫০ গ্যালন জল খরচ হয়।
পশুপালন শিল্পের কারখানায় বিভিন্ন ব্যবস্থায় বাতাস দূষিত হয় এবং ৪০০-রও বেশি গ্যাস নির্গত হয়, বেশির ভাগটাই বিশাল পরিমাণ পশু বর্জ্যের কারণে। প্রধানত যে সব গ্যাস নির্গত হয়, তার মধ্যে রয়েছে, হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন, অ্যামোনিয়া ও কার্বন ডাই অক্সাইড। বায়ূদূষণের ক্ষেত্রে এই গ্যাসগুলি বিপজ্জনক, এগুলি পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য –দু’য়ের পক্ষেই অত্যন্ত ক্ষতিকারক। বর্জ্যের কারণ শিল্প খামারগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রিক অক্সাইডও নির্গত হয়। অ্যাসিড বৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হল এই গ্যাস।



Comments