উদ্ভিদের পুষ্টি কাকে বলে

উদ্ভিদের পুষ্টি কাকে বলে

উদ্ভিদ অজৈব খনিজকে পুষ্টির জন্য ব্যবহার করে। পাথুরে খনিজের ক্ষয়, জৈব পদার্থের পচন, প্রাণী ও জীবাণুর জটিল বিক্রিয়ায় মাটিতে অজৈব খনিজের সৃষ্টি হয়। উদ্ভিদের শিকড়আয়ন হিসাবে পুষ্টিদায়ক খনিজ পদার্থ শুষে নেয়। উদ্ভিদ কতটা পুষ্টিদায়ক পদার্থ পাবে, তা অনেকগুলি শর্তের ওপর নির্ভর করে। শিকড়েই আয়ন পাওয়া যায় অথবা অন্যান্য পদার্থ কিংবা মাটির মধ্যে থাকা আয়নই উদ্ভিদের পুষ্টি সংগ্রহে সহায়তা করে। মাটিতে ক্ষারের পরিমাণ খুব বেশি হয়ে গেলে বা অ্যাসিডের পরিমাণ খুব কম হয়ে গেলে উদ্ভিদ মাটি থেকে খনিজ পদার্থ পায় না।

উর্বরতা অথবা পুষ্টি

উর্বরতা কথার অর্থ হল, উদ্ভিদকে যথেষ্ট পরিমাণে ও যথাযথ অনুপাতে পুষ্টিদায়ক পদার্থ সরবরাহ করার ব্যাপারে মাটির সহজাত ক্ষমতা। পুষ্টি কথার অর্থ হল, কিছু পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত কয়েকটি পর্যায় যার মধ্য দিয়ে কোনও সজীব প্রাণী খাদ্য আত্মীকরণ করে এবং নিজের বৃদ্ধি ও টিস্যুর পুনঃস্থাপনে কাজ করা। আগে, উদ্ভিদের পুষ্টির বিষয়টা মাটি কতটা উর্বর সেই দৃষ্টিকোণ থেকে অথবা কতটা সার দিলে মাটিতে খনিজ পদার্থের পরিমাণ বাড়বে, সে দিক থেকে দেখা হত। বেশির ভাগ সার মাটিতে খনিজ পদার্থের অভাব পূরণের কথা ভেবে তৈরি করা হত। মাটিহীন মিশ্রণের (সয়েললেস মিক্স) ব্যবহার, পুষ্টিদায়ক পদার্থ নিয়ে উন্নত গবেষণা, মাটি ছাড়া চাষ এবং উদ্ভিদের টিস্যু সংক্রান্ত আধুনিক গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভিদের পুষ্টির ব্যাপারে উন্নততর উপলব্ধিতে পৌছনো সম্ভব হয়েছে।
উদ্ভিদের পুষ্টি হল এমন একটি বিষয়, যাতে মাটিতে বা মাটিহীন দ্রবণে খনিজ পদার্থগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক ও উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে চর্চা হয়ে থাকে। এই পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে উদ্ভিদের সুষম বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য ও উপকারী খনিজ পদার্থের জটিল ভারসাম্যের বিষয়টিও রয়েছে।

অপরিহার্য বনাম উপকারী

অপরিহার্য খনিজ উপাদান (অথবা পুষ্টিদায়ক খনিজ) কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন আরনন ও স্টাউট (১৯৩৯)। তাঁরা বলেন, কোনও একটি উপাদানকে অপরিহার্য বলতে হলে তাকে ৩টি শর্ত পূরণ করতে হবে।
শর্তগুলি হল-
  • ১। একটি উদ্ভিদ ওই খনিজ পদার্থটি না থাকলে জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে পারবে না।
  • ২। ওই উপাদানটির যা কার্যকারিতা, তা অন্য কোনও বিকল্প উপাদান দিয়ে সম্পন্ন করা যাবে না।
  • ৩। উপাদানটি উদ্ভিদের বিপাক প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নেবে।
উদ্ভিদের পুষ্টির ক্ষেত্রে এই শর্তগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর মধ্যে উপকারী খনিজ পদার্থের কথা বলা নেই। যে সব উপাদান অন্যান্য খনিজের বিষক্রিয়াকে নির্মূল করে এবং আস্রবণ চাপ বজায় রাখার মতো কিছু বিষয়ে সহায়তা করে, সেগুলি হল উপকারী উপাদান। বাণিজ্যিক ভাবে এই সব উপকারী উপাদানের উৎপাদন না হওয়ার মানে হল, উদ্ভিদ তার জিনগত ক্ষমতা অনুযায়ী বৃদ্ধি পাবে না, কেবলমাত্র টিকে থাকার মতো বৃদ্ধি ঘটবে। উদ্ভিদের পুষ্টি সংক্রান্ত এই আলোচনায় অপরিহার্য এবং উপকারী, দু’ধরণের খনিজ পদার্থ নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে।

খনিজ উপাদানগুলি কী কী ?

উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য মোট ২০টি অপরিহার্য বা উপকারী খনিজ পদার্থ আছে।
  • ১. কার্বন (C) , হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (O) -- এই তিনটি উপাদান বাতাস এবং জলে পাওয়া যায়।
  • ২. নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), পটাসিয়াম (K), ক্যালসিয়াম (Ca), ম্যাগনেসিয়াম (Mg) এবং সালফার (S) বা গন্ধক -- এই ৬টি পুষ্টিদায়ক পদার্থ উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পরিমাণে লাগে।
  • ৩. এ ছাড়াও কিছু পুষ্টিদায়ক পদার্থ সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয়। এ ধরনের উপাদানগুলির মধ্যে যেগুলি অপরিহার্য, সেগুলি হল-- বোরন (B), ক্লোরিন (Cl), কপার (Cu) বা তামা, আয়রন (Fe) বা লোহা, ম্যাঙ্গানিজ (Mn), সোডিয়াম (Na), জিঙ্ক (Zn) বা দস্তা, মলিবডেনাম (Mo) ও নিকেল (Ni)। অন্যান্য উপকারী উপাদানগুলি হল সিলিকন (Si) ও কোবাল্ট (Co)।
উপকারী উপাদানগুলি সব উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অপরিহার্য নয়, কয়েকটির ক্ষেত্রে অপরিহার্য। সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয়, এমন উপাদানগুলির ক্ষেত্রে উপকারী এবং অপরিহার্যের মধ্যে তফাৎ করাটা কঠিন। যেমন, কোবাল্ট কলাই শস্যে নাইট্রোজেনের পরিমাণ স্থির রাখতে সাহায্য করে। দেখা গেছে, উদ্ভিদের তাপ ও খরা পরিস্থিতি সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ায় কোষের দেওয়ালে জমে থাকা সিলিকন। পাশাপাশি সিলিকন কীটপতঙ্গ ও ছত্রাকের আক্রমণ থেকেও উদ্ভিদকে রক্ষা করে। সিলিকন একটি উপকারী পদার্থ হিসেবে অতিরিক্ত ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, ফসফরাস ও অ্যালুমিনিয়ামের বিষক্রিয়া রোধ করে। দস্তার অভাবও পূরণ করে। উদ্ভিদের পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়টিকে যদি একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখা যায়, তা হলে একে কখনওই অপরিহার্য পুষ্টিদায়ক পদার্থ নিয়ে আলোচনার মধ্যে বেঁধে রাখা যাবে না। এর মধ্যে যাবতীয় উপকারী উপাদানগুলিকেও রাখতে হবে, কারণ সেগুলোকে বাদ দিয়ে উদ্ভিদের সুষম বেড়ে ওঠা সম্ভব হয় না।
বিশ্লেষণী রসায়নবিদ্যার বিকাশ এবং পুষ্টিদায়ক পদার্থের উৎপাদন থেকে দূষিত উপাদানগুলিকে বাদ দিতে পারলে অপরিহার্য উপাদানের সংখ্যা ভবিষ্যতে অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

Comments