- Get link
- X
- Other Apps
ফলের রাজা আম
‘আম’কে ফলের রাজা বলা হয়, আর এই ফলটিকে সবাই কমবেশি পছন্দ করেন। এটা মনে করা হয় যে, এই ফলটির উৎস আমাদের দেশেই। ভারতবর্ষে ৬০০০ বছর আগে আমের চাষ শুরু হয়। রামায়ণ ও মহাভারতের মতো মহাকাব্যেও এই ফলের উল্লেখ পাওয়া যায়। সারা পৃথিবীর মধ্যে ট্রপিক্যাল দেশগুলিতেই আমের ফলন হয়। ভারতে আনুমানিক ৮ লক্ষ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়, যা উৎপাদনের নিরিখে সারা পৃথিবীর ৮০%। যদিও রফতানির ক্ষেত্রে এই ফলটির অবদান খুবই কম। আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়। আমের চাষের বাকি উল্লেখযোগ্য রাজ্যগুলি হল উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, কেরালা, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু। অতীতে রাজা-মহারাজা-বাদশারা তাঁদের রাজত্বকালে এই ফলটির চাষে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, যার প্রমাণ প্রচলিত আমের জাতের নামকরণের মধ্যেই রয়েছে – রানিপসন্দ, সফদরপসন্দ, কিসেনভোগ, লক্ষ্মণভোগ। এ ছাড়াও, গোলাপখাস, পেয়ারাফুলি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, চৌসা ইত্যাদি। শুনলে অবাক হতে হয় মুর্শিদাবাদ জেলায় ‘কোহিতুর’ নামে আমের যে প্রজাতির চাষ হয়, সেটি এতই সংবেদনশীল যে তুলোয় মোড়া আঁকশির সাহায্যে গাছ থেকে তাকে পাড়তে হয় এবং পরে তুলোর বাক্সে তাকে রাখতে হয়। নচেৎ দাগি হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। অতীতের আমের জাতগুলির অনিয়মিত ফলন একটি বড় সমস্যা। সাধারণত এক বছর অন্তর ফলন হয়। সে কারণে, ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কৃষি-গবেষকদের নিরলস প্রচেষ্টা ও প্রয়াসে আমের কয়েকটি সংকর জাতের উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আম্রপালি, মল্লিকা, রত্না ইত্যাদি। এই সংকর জাতগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল আয়তনে ও উচ্চতায় প্রচলিত জাতগুলি থেকে ছোট হওয়ার ফলে অল্প জায়গায় লাগানো যায়। যে কারণে প্রচলিত জাতের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় যতগুলো গাছ লাগানো যায়, ওই সম-আয়তনের জায়গায় সংকর জাতের গাছ দ্বিগুণ সংখ্যায় লাগানো যায়। অন্য দিকে সংকর জাতের গাছ নিয়মিত ফলন দেয় এবং এই ফল দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। এর ফলন প্রচলিত জাতের থেকে অনেক বেশি এবং স্বাদেও বেশি মধুর হয়। উন্নত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা যদি আমের চাষ, সংরক্ষণ ও গুদামজাত করার উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে পারি তা হলে এই ফল রফতানি করে আমরা প্রচুর বিদেশি মুদ্রা অর্জন করতে পারি। কারণ এই ফলটির কদর সারা পৃথিবী জুড়ে এবং আমরাই সারা পৃথিবীর সিংহভাগ এলাকায় আমের চাষ করি।
জাত-জমি
- জাত জলদি
- জমি নির্বাচন
জাত জলদি
গোলাপখাস, সরিখাস, পেয়ারাফুলি, সফদারপসন্দ, বোম্বাই ইত্যাদি। মাঝারি – হিমসাগর, রানিপসন্দ, কিশেনভোগ, অনুপম ইত্যাদি। নাবি – ল্যাংড়া, ফজলি, লক্ষণভোগ, চৌসা, আশ্বিনা, আম্রপালি, মল্লিকা ইত্যাদি
জমি নির্বাচন
ফলের বাগান করার জন্য অতিরিক্ত জল বের হওয়ার উপযুক্ত নিকাশিব্যবস্থার সুবিধাযুক্ত উঁচু পর্যাপ্ত রোদ পায় এই ধরনের জমি নির্বাচন করতে হবে। জমির মাটি উপযুক্ত করার জন্য চারা লাগানোর আগে ওই জমিতে সবুজ সার হিসাবে ধনে, কলাই ইত্যাদি চাষ করে মাটিতে মেশাতে হবে। বাগানের ভিতর জলের উত্স থাকার প্রয়োজন আছে সেচের সুবিধার জন্য। বাগানের চার দিকে ঘন পাতাবিশিষ্ট গাছ যেমন সোনাঝুরি ইত্যাদি জাতীয় গাছ লাগাতে হবে, যাতে ফলের গাছ ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে পারে। বাগানের মধ্য যাতায়াতের জন্য রাস্তা এবং সেচ ও নিকাশি নালা করার জন্য ফাঁকা জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বর্ষার শুরুতে চারা লাগানোর এক মাস আগে সঠিক মাপের গর্ত খুঁড়ে তাতে পর্যাপ্ত জৈবসার দিয়ে রাখতে হবে। চারা লাগানোর আগে নিমখোল বা উইপোকা নিয়ন্ত্রণকারী কীটনাশক দিতে হবে। পিট বা গর্তের মাপ ১ মি x ১ মি x ১ মি সাইজের পিট বা গর্ত করতে হবে। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব আম্রপালি ও মল্লিকার ক্ষেত্রে – ৬ মি x ৬ মি অন্যান্য জাতের ক্ষেত্রে – ১১ মি x ১১ মি
সার ও পরিচর্যা
- পিট বা গর্তে সারের পরিমাণ
- সারের পরিমাণ
- পরিচর্যা
পিট বা গর্তে সারের পরিমাণ
চারা লাগানোর এক মাস আগে প্রতিটি গর্তে জৈবসার ২০ কেজি, নিমখোল ১.৫–২ কেজি এবং ফলিডল ডাস্ট ২৫ গ্রাম, আর ৫০০ গ্রাম সি. সুপার ফসফেট দিতে হবে।
সারের পরিমাণ
বর্ষার আগে প্রতি গাছ লাগানোর আগে জৈবসার ২০ কেজি ও না : ফ : প - ৫০ গ্রাম : ২৫ গ্রাম : ২৫ করে দিতে হবে। এর পর বর্ষার পরে একই হিসাবে সার দিতে হবে। এর পর গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে সারের পরিমাণ নির্দিষ্ট হারে বাড়াতে হবে এবং প্রতিটি ফলন্ত গাছে সর্বোচ্চ বর্ষার আগে জৈবসার ৫০ কেজি ও নাইট্রোজেন ১ কেজি আর বর্ষার পরে জৈবসার ৫০ কেজি ফ ও প, ৭৫০ গ্রাম করে দিতে হবে।
পরিচর্যা
গ্রীষ্ম ও শীতে প্রয়োজনমতো সেচ দিতে হবে, প্রয়োজনে ৩–৪ সপ্তাহ অন্তর সেচ দিতে হবে। গ্রীষ্মকালীন সয়মে ২–৩ বার লাঙল দিয়ে চাষ দিলে আগাছা-সহ রোগ ও পোকার উপদ্রব কম হবে। যে হেতু ফলের বাগানে ৩–৪ বছরের আগে ফল পাওয়া যায় না, এ জন্য ফাঁকা জমিতে সাথী ফসলের চাষ করা যেতে পারে। প্রয়োজনমাফিক ডালপালা ছাঁটতে হবে এবং রোগ পোকা আক্রান্ত ডালপালা কেটে পুড়িয়ে দিতে হবে। সঠিক ও সুষম সার প্রতি গাছে দু’বার অর্থাৎ বর্ষার আগে ও পরে কাণ্ডের গোড়া থেকে কিছু দূরে গোলাকার গর্ত করে দিয়ে ভালো করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে, যাতে শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অতিরিক্ত শীত ও গ্রীষ্মের সময়ে সার প্রয়োগ করা যাবে না। আমের গুটি ধরার ঠিক পরেই এক বার ও ১৫ দিন পর আর এক বার আলফা ন্যাপথেলিন অ্যাসেটিক অ্যাসিড জাতীয় ওষুধ ২০ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে অসমসয়ে গুটি ঝরা কমানো যায়। গুটি ধরার পর বৃষ্টি না হলে শুধু মাত্র স্প্রে করেও ফলের বোঁটা শক্ত হয়।
শোষক পোকা
- লক্ষণ
- প্রতিকার
কজাল অরগানিজম – আমরিটোডাস অ্যাটকিনসোনি, ইডিয়াসকোপাস ক্লাইপিয়ালিস, ইডিয়াসকোপাস নিভিওসপারসাস
লক্ষণ
সব থেকে ক্ষতিকারক এই পোকাটিকে দেখতে আকারে ছোট, ডানাগুলি শক্ত ও মাথাটি বেশ বড় এবং ধূসর রঙের হয়। গাছে মুকুল আসার পর আক্রমণ শুরু হয়, তবে বছরের অন্য সময়েও আক্রমণ হতে পারে। সাধারণত এরা জানুয়ারি–মার্চের মধ্য ডিম পাড়ে, উত্তর ভারতে বছরে এরা দু’বার ডিম পাড়ে ফেব্রুয়ারি–এপ্রিল এবং জুন–আগস্টের মধ্যে। সাধারণত ফুল, কাণ্ড বা মুকুলের মধ্যে এরা ডিম পাড়ে, ফের ঝাঁকে ঝাঁকে অসংখ্য পূর্ণাঙ্গ পোকা মুকুল, কচি পাতা ও আমের গুটি আক্রমণ করে রস চুষে খায় ফলে মুকুল হলদে হয়ে শুকিয়ে ঝরে যায়। এই পোকার শরীর থেকে এক ধরনের মিষ্টি রস বের হয়। যা থেকে পরবর্তীতে ফুল ও পাতায় এক প্রকার ছত্রাকের জন্ম দেয়, এর ফলে পাতা ও ফুল কালো হয়ে যায়।
প্রতিকার
প্রথমত, বাগান পরিষ্কার রাখতে হবে এবং অতিরিক্ত গাছ বা জল জমে যেন না থাকে। কারণ বেশি আর্দ্রতা এই পোকার বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল। শীতকালে গাছের গুড়িতে পোকাগুলি থাকে। এ জন্য নিম্নের যে কোনও রাসায়নিক ওষুধ দিয়ে গুড়ি স্প্রে করে ধুয়ে দিতে হবে। এ ছাড়াও কুঁড়ি বের হওয়ার আগে, তার পর মুকুল বেরোনোর সময় ২–৩ বার, ১৫–২০ দিন অন্তর যে কোনও একটি রাসায়নিক ওষুধ স্প্রে করতে হবে। যেমন এত্তোসালফান ৩৫ ইসি ১.৫ মিলি বা মিথাইল ডেমিটন ২৫ ইসি ২.০ মিলি বা কার্বারিল ৫০% ২.৫ গ্রাম বা মনোক্রটোমফস ৩৬ ইসি ১.৫ মিলি বা ইমিডাক্লোরোপিড ১৭.৮% এসএল ১ মিলি (৫ লিটার জলে) বা সায়োমিথাগ্রাম ২৫% ডব্লু জি ১ গ্রাম বা এবামেফটিন ১.৯% ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
মুকুলে গুটি সৃষ্টিকারী পোকা
- লক্ষণ
- প্রতিকার
কজাল অরগানিজম - অ্যাপসিলা সিসটেল্লাটা
লক্ষণ
এই পোকার আক্রমণে গাছের ডগায় মুকুলের পরিবর্তে ছোট ছোট সবুজ রঙের পদ্ম কোরকের মতো গুটি তৈরি করে। গুটির ভিতরে ছোট ছোট প্রায় গোলাকার হালকা ঘি রংয়ের কীড়া দেখা যায়। ওই গুটি-ধরা ডালে আম হয় না, মার্চ মাসে পাতার নীচের দিকে মধ্যশিরা বরাবর এরা ডিম পাড়ে। আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গুটিগুলির সৃষ্টি হয়।
প্রতিকার
আক্রান্ত শাখা গুলি ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গাছের গোড়ায় এপ্রিল–মে মাসের মাঝামাঝি গাছের গোড়ায় মিথাইল প্যারাথিয়ন ২% (গুঁড়ো) ২৫–৩০ কেজি/হেক্টর ছড়ালে আক্রমণের প্রাদুর্ভাব কম হয়। এ ছাড়াও, সেপ্টেম্বর মাসে শোষক পোকার ন্যায় যে কোনও একটি রাসায়নিক ওষুধধ স্প্রে করতে হবে।
আমের গায়ে পোকা (মিলি বাগ)
- লক্ষণ
- প্রতিকার
কজাল অরগানিজম - ড্রোসিকা ম্যানগিফেরা
লক্ষণ
ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুন–জুলাই মাস পর্যন্ত এই পোকার আক্রমণ হয়। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত মাটির ৫–১৫ সেমি গভীরে এরা ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অপূর্ণাঙ্গ পোকা বের হয়ে গাছে ওঠে এবং পোকাগুলি এক জায়গায় জড়ো হয়ে গাছের নরম ডাল ও মুকুলের রস চুষে খায়। তার ফলে আক্রান্ত অংশ শুকিয়ে যায় এবং ফলন ভীষণ ভাবে কমে যায়।
প্রতিকার
বাগান পরিষ্কার রাখতে হবে এবং গ্রীষ্মকালে গোড়ার চার পাশে মাটি খুঁড়ে ডিমগুলি নষ্ট করে দিতে হবে। এ ছাড়াও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রতি গাছের গোড়ায় ২৫০ গ্রাম হারে মিথাইল প্যারাথিয়ন ২% গুঁড়ো প্রয়োগ করতে হবে। ডিসেম্বর–জানুয়ারি মাসে যখন পোকা গাছে ওঠা শুরু করছে তখন কার্বারিল ৫০% ডবলুপি ২.৫ গ্রাম বা নুভাক্রন ৩৬% ১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে কাণ্ডে ভালো ভাবে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়াও, কীটগুলি যাতে গাছে উঠতে না পারে তার জন্য কাণ্ডের চার ধারে রেড়ির তেল ও রেজিন দিয়ে তৈরি মিশ্রণটি কাণ্ডের গায়ে লাগিয়ে রাখত হবে এবং দু’ ফুট চওড়া পলিথিনের চাদর গাছের কাণ্ডে লেপের মতো বেঁধে দিলে পোকাগুলি পিছলে পড়ে ওই চাদরে পড়ে যাবে এবং পরে পোকা গুলি সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
আমের মাছি (ফ্রুট ফ্লাই)
কজাল অরগানিজম - ব্যাকটোসেরা ডোরসালিস
লক্ষণ
আম পাকার সময় এরা ফলের গায়ে এক সাথে ১৫০–২০০টি ডিম পাড়ে। কয়েক দিনের মধ্যে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে আমের শাঁস খেতে শুরু করে। আক্রান্ত আম ভিতর থেকে পচতে শুরু করে ও ঝরে পড়ে। ফলের চেহারা প্রথম দিকে স্বাভাবিক থাকে। পরে ফলের গায়ে গাড় বাদামি বা কালচে বাদামি রঙের গোলাকার পচনশীল দাগ দেখা যাবে এবং দুর্গন্ধ যু্ক্ত হবে।
প্রতিকার
বাগান পরিষ্কার ও আবর্জনা মুক্ত রাখতে হবে। গ্রীষ্মকালে গাছের তলা ও চার পাশের মাটি লাঙল দিয়ে রোদ খাওয়াতে হবে যাতে মূককীটগুলি রোদে নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়াও আক্রান্ত ঝরে পড়া আমগুলি সংগ্রহ করে পুড়িয়ে নষ্ট করে দিতে হবে। রাসায়নিক ওষুধের মধ্যে ম্যালাথিয়ন ৫০% ২.০ মিলি বা র্কাবারিল ৫০% ডবলুপি ২.৫৪ গ্রাম বা অ্যাসিফেট ৭৫% ডবলুপি ০.৭৫ গ্রাম ইত্যাদি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়াও বিষাক্ত টোপ ব্যবহার করেও এদের দমন করা যায় -- সোডিয়াম ফ্লুসিলিকেট (১ ভাগ) তার সাথে ঝোলা গুড় (৬ ভাগ) জলের সাথে মিশ্রণ অথবা লেড আর্সেনেট (১ ভাগ) তার সাথে ঝোলা গুড় (২৪ ভাগ) জলের সাথে মিশ্রণ।
ছিদ্রকারী পোকা
- আমের শাখা ছিদ্রকারী পোকা (ম্যাঙ্গো শুট বোরার) কজাল অরগানিজম – ডিউমেশিয়া ট্রান্সভারসা
- লক্ষণ
- প্রতিকার
- ফল ছিদ্রকারী পোকা কজাল অরগানিজম – ডিয়ানোলিস আলবিজোনালিস
- লক্ষণ
- প্রতিকার
- আমের মাজরা পোকা (ম্যাঙ্গো স্টেম বোরার) কজাল অরগানিজম – ব্যাক্টোসেরা রুফোমাকুলাটা
- লক্ষণ
- প্রতিকার
- আমের আঁটি ছিদ্রকারী পোকা (ম্যাঙ্গ স্টোন উইভিল) কজাল অরগানিজম – স্টেরাওসেটাস ম্যানগিফেরা
- লক্ষণ
- প্রতিকার
- আমের শাখা ছিদ্রকারী পোকা (ম্যাঙ্গো শুট বোরার) কজাল অরগানিজম – ডিউমেশিয়া ট্রান্সভারসা
আমের শাখা ছিদ্রকারী পোকা (ম্যাঙ্গো শুট বোরার) কজাল অরগানিজম – ডিউমেশিয়া ট্রান্সভারসা
লক্ষণ
এই পোকার কীড়া বর্ধনশীল শাখার আগায় ছিদ্র করে ভিতরে প্রবেশ করে এবং ৮–১০ সেমি পর্যন্ত শাখার নীচের দিকে ছিদ্র করে। এর আক্রমণের ফলে শাখা শুকিয়ে মরে যায়।
প্রতিকার
আক্রান্ত শাখা কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আর নতুন শাখা গজানোর সময় কার্বারিল ০.২% , নুভাক্রন ৩৬% ১.৫ মিলি বা ডাইক্লোরেডিস ৭৬% ০.৭৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে এক দু’ বার স্প্রে করলে এই পোকা দমন করা যায়।
ফল ছিদ্রকারী পোকা কজাল অরগানিজম – ডিয়ানোলিস আলবিজোনালিস
লক্ষণ
পূর্ণাঙ্গ পোকা আমের খোসার নীচে ডিম পাড়ে। কীড়া ডিম থেকে বেরিয়ে শাঁস ভেদ করে বীজে প্রবেশ করে। বত্সরে দু’বার, একবার মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ফল যখন ছোট মার্বেলের আকারে আর এক বার ও মে মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে ফল যখন ১৮–১০ সেমি লম্বা তখন আক্রমণ হয়। এরা সর্বদা আমের অগ্রভাগ অর্থাৎ বোঁটার উল্টো দিক থেকে প্রবেশ করে।
প্রতিকার
বাগান পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ছাড়াও রাসায়নিক ওষুধ দ্বারা দমনের জন্য এডোসালফান ৩৫% ২.০ মিলি বা মনোঘাটোফস ৩৬% ১.৫ মিলি বা কুইনালফস ২৫% ২.০ মিলি বা ক্লোরোপাইরিফস ২০% ২.৫ মিলি বা কার্বারিল বা ডাইক্লোরোভস ৭৬% ০.৭৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে ২৫ দিন অন্তর দুবার স্প্রে করতে হবে।
আমের মাজরা পোকা (ম্যাঙ্গো স্টেম বোরার) কজাল অরগানিজম – ব্যাক্টোসেরা রুফোমাকুলাটা
লক্ষণ
এই পোকার কীড়া (গ্রাব) গাছের কাণ্ড ও শাখায় ফুটো করে ভিতরে ঢুকে নরম অংশ কুরে খায়। আক্রান্ত অংশে যে নালির সৃষ্টি হয় তার বাইরে মল ও কাঠের গুঁড়ো দেখে এদের উপস্থিতি বোঝা যায়। আক্রান্ত শাখা শুকিয়ে মরে যায়, গাছের কাণ্ড ফোঁপরা হয়ে সহজে ভেঙে যায়।
প্রতিকার
আক্রান্ত নালিতে আলকাতরার সাথে ডিডিডিপি বা ন্যাপথেলিন মিশ্রণ ঢুকিয়ে গর্তের মুখ মাটি দিয়ে বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়াও রাসায়নিক ওষুধ যেমন ফসফোমেডিন ৪০% বা মনোক্রটোফস ৩৬% ১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে কাণ্ডে ভালো ভাবে স্প্রে করতে হবে।
আমের আঁটি ছিদ্রকারী পোকা (ম্যাঙ্গ স্টোন উইভিল) কজাল অরগানিজম – স্টেরাওসেটাস ম্যানগিফেরা
লক্ষণ
নাবি জাতের ক্ষেত্রে আক্রমণ বেশি হয়। মূলত দক্ষিণ ভারতে প্রাদুর্ভাব বেশি। পূর্ণাঙ্গ মাছি ঘন বাদামি রঙের এরা আমের খোসার ওপর মটর দানার মতো ডিম পাড়ে। পরে ডিম থেকে কিড়া (গ্রাব) বের হয়ে শাঁস ভেদ করে বীজে ঢুকে যায়। ফল পাকার সময় পূর্ণাঙ্গ পোকা আঁটি থেকে বের হয়ে আসে, পূর্ণাঙ্গ পোকা সাধারণত মাটির ভিতরে লুকিয়ে থাকে পরবর্তী মরশুমের জন্য।
প্রতিকার
বাগান পরিষ্কার রাখতে হবে। আক্রান্ত ফল ও আঁটি সংগ্রহ করে মাটিতে পুঁতে নষ্ট করতে হবে বা পুড়িয়ে ফলতে হবে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালীন চাষ দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি রোদ খাওয়াতে হবে। আর রাসায়নিক ওষুধ ফেনথিয়ন ১৫ দিন অন্তর দু’বার স্প্রে করতে হবে যখন গায়ের গুটি মার্বেল সাইজের মতো হবে।
Comments
Post a Comment