Skip to main content

পুকুরে মাছ চাষ, পাড়ে সব্জির

পুকুরে মাছ চাষ, পাড়ে সব্জির

দেবমাল্য বাগচি

খড়্গপুর ১৫ জুলাই, ২০১৫, ০০:০০:০০
কথায় বলে মাছ-ভাতে বাঙালি।
কিন্তু মাছ চাষে বাঙালি যে কয়েকশো যোজন পিছিয়ে সে খবর রাখে কে?
পিছিয়ে থাকার মূল কারণ প্রাচীন-অর্ধঘন পদ্ধতিতে মাছ চাষ—যাতে পুকুরে প্রতি দু’বর্গমিটারে দুই থেকে তিনটি মাছ বড় হতে পারে। মাছচাষিদের মতে, এক সঙ্গে এর চেয়ে বেশি মাছ থাকলে বর্জ্য থেকে দূষণ ছড়ায়। খাদ্য ও অক্সিজেনের অভাবে মাছেদের মৃত্যু হতে পারে।
চাষিদের যুক্তি মেনে নিয়ে সমাধানের পথ বাতলেছে খড়্গপুর আইআইটি-র কৃষি বিভাগ। ‘সমন্বিত মাছ ও সব্জি চাষ’ প্রকল্পে ছোট পুকুরে মাছ উৎপাদনের লাভজনক পথ দেখাচ্ছে তারা। এই পদ্ধতিতে মাছচাষ করলে দু’বর্গমিটারে দশটি পর্যন্ত মাছ উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কী ভাবে?

প্রথমেই এয়ারেটর (পুকুরে অক্সিজেন জোগানের যন্ত্র)  চালিয়ে জলে অক্সিজেন সরবরাহ করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। দু’নম্বরে আসছে খাবারের অভাব মেটানোর বিষয়টি। সনাতন পদ্ধতির চাষে পুকুরে খোল, সুপার ফসফেট, গোবর, ইউরিয়া দিয়ে উদ্ভিদকণা ও প্রাণিকণা উৎপন্ন করা হয়। আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিক মাছচাষের জন্য অতিরিক্ত খাদ্য প্রয়োজন। তাই  পরিমাপ মতো বাজারে উপলব্ধ কিছু কৃত্রিম খাবার মাছকে দিতে হবে। আর বর্জ্য মিশে দূষণের প্রতিকার হিসাবে বিজ্ঞানীরা দূষিত জল নিয়মিত বদলানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। জলের ব্যবহার আরও বৈজ্ঞানিক করতে পুকুর পাড়ে সব্জি চাষের কথা বলছেন তাঁরা। বর্জ্য মেশানো পুকুরের জলে নাইট্রোজেন ও ফসফেট থাকায় তা সব্জি চাষে উপকারী সারের কাজ করবে। পুকুর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ জল পরিবর্তন করে পাড়ের সব্জি চাষে ব্যবহার করতে হবে। আর যে ভূ-গর্ভস্থ জল সব্জি চাষে প্রয়োজন ছিল তা পুকুরে দিতে হবে। এর ফলে একই পরিমাণ ভূ-গর্ভস্থ মিষ্টি জল ব্যবহার করে অধিক মাছ ও সব্জি চাষ করা যাবে। কমবে সব্জিচাষে সারের খরচ।
ইতিমধ্যে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে উপকার পেয়েছেন কিছু চাষি।  খড়্গপুরের পুরাতনবাজারের মাছচাষি অমিতাভ ঘোষ বলেন,  “আমি অধিক সংখ্যক মাছ ছেড়ে বছরের বিভিন্ন সময়ে তুলে নিই। পুকুরের জল দিয়ে সব্জি চাষও করি। আইআইটিতে গিয়ে এগুলো শিখে এসেছি।’’ আইআইটি-র কৃষি বিভাগের অধ্যাপক তথা ছত্তীসগঢ় স্বামী বিবেকানন্দ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য বিমলচন্দ্র মাল বলেন, ‘‘আমরা ১৫০ বর্গমিটারের ন’টি পুকুর খনন করে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। দেখেছি বছরে এক একরে প্রায় ছ’টন মাছ উৎপন্ন হচ্ছে।’’
নিজেদের মতো করে বাংলার মাছচাষিরা অবশ্য উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বহু দিন ধরে। কোথাও জলাশয়ে বেশি মাছ ছেড়ে বছরের বিভিন্ন সময়ে তা তুলে ভারসাম্য বজায়ের চেষ্টা চলছে। আবার দুই মেদিনীপুরে কোথাও পুকুর পাড়ে সব্জি চাষ হচ্ছে। সমন্বিত চাষ নিয়েই দীর্ঘ দিন ধরে বাংলায় কাজ করছে ‘ডিআরসিএসসি।’ নিবিড় মাছ চাষ নিয়েও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তারা। সংস্থার উপদেষ্টা অর্ধেন্দুশেখর চট্টোপাধ্যায় জানান, পুকুরে একই সঙ্গে হাঁস আর মাছ চাষ করলে উপকার পাওয়া যায়। হাঁসের বিষ্ঠা যেমন মাছের খাবার হিসাবে কাজ করে, তেমনই হাঁসের পায়ের ঝাপটায় পুকুরে যে আন্দোলন হয়, তাতে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে। পুকুরপাড়ে তুঁত চাষ করে তার পাতাও মাছেদের খাবার হিসাবে দেওয়া যায়। অর্ধেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘একসঙ্গে মাছ ও সব্জি চাষ করলে তারা পরিপূরক হিসাবে কাজ করে। লোকসানের সম্ভাবনা কমে।’’
আইআইটি-র ‘সমন্বিত মাছ ও সব্জি চাষ’ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নারায়ণ বাগ  এখন উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের মৎস্য দফতরের আধিকারিক। তিনি বলেন, “আমি যেখানে পেরেছি এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বক্তব্য রেখেছি।  ভবিষ্যতে ভূগর্ভস্থ জলের সঙ্কট হবে যখন, তখন এর প্রকৃত উপকারিতা চাষিরা বুঝবেন।’’ 

Comments