করলা চাষ

করলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি। স্বাদে তিক্ত হলেও বাংলাদেশের সকলের নিকট এটি প্রিয় সবজি হিসেবে পরিচিত। ১০০ গ্রাম  ভক্ষণ যোগ্য করলায় ১.৫-২.০ ভাগ আমিষ, ২০-২৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.৮-২.০ মিলিগ্রাম লৌহ এবং ৮৮.৯৬ মিলিগ্রাম খাদ্যপ্রাণ সি আছে।
মাটি ও আবহাওয়া
উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় করলা ভাল জন্মে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পরাগায়ন বিঘ্নিত হতে পারে। সব রকম মাটিতেই করলার চাষ করা যেতে পারে। জৈব সার সমৃদ্ধ দো-আঁশ বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভাল জন্মে।
জাত
বারি করলা-১: জাতটিতে গাঢ় সবুজ রংয়ের ২৫-৩০ টি ফল ধরে (গাছ প্রতি)। প্রতি ফলের গড় ওজন ১০০ গ্রাম  যা লম্বায় ১৭-২০ সেমি এবং ব্যাস ৪-৫ সেমি। চারা রোপণের ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল তোলা যায়। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ফলন ২৫-৩০ টন পাওয়া যায়।
গজ করলা: জাতটিতে সবজ রংয়ের ১৫-২০ টি ফল ধরে (গাছ প্রতি)। প্রতি ফলের গড় ওজন ১৫০-২০০ গ্রাম, যা লম্বায় ২৫-৩০ সেন্টিমিটার এবং ব্যাস ৬-৭ সেন্টিমিটার। হেক্টর প্রতি ফলন ২০-২৫ টন (১০০ ১২০ কেজি/শতাংশ) পাওয়া যায়।
জীবন কাল
মোট জীবনকাল প্রায় চার থেকে সারে চার মাস। তবে জাত ও আবহাওয়াভেদে কোন কোন সময় কম বেশী হতে পারে।
উৎপাদন মৌসুম
ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে যে কোন সময় করলার বীজ বোনা যেতে পারে। কেউ কেউ জানুয়ারী মাসেও বীজ বুনে থাকেন কিন্তু এ সময় তাপমাত্রা কম থাকায় গাছ দ্রুত বাড়তে পারে না, ফলে আগাম ফসল উৎপাদনে তেমন সুবিধা হয় না।
বীজের হার
করলা ও উচ্ছের জন্য হেক্টর প্রতি যথাক্রমে ৬-৭.৫ও ৩-৩.৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
জমি তৈরী ও বপন পদ্ধতি
উচ্ছে ও করলার বীজ সরাসরি মাদায় (৪০/৪০/৪০ সেন্টিমিটার) বোনা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতি মাদায় কমপক্ষে ২টি বীজ বপন অথবা পলিব্যাগে উৎপাদিত ১৫-২০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। উচ্ছের ক্ষেত্রে সারিতে ১.০ মিটার এবং করলার জন্য ১.৫ মিটার দূরত্বের মাদা তৈরী করতে হবে। মাদা বীজ বুনতে বা চারা রোপণ করতে হলে অন্ততঃ ১০ দিন আগে মাদা নির্ধারিত সার প্রয়োগ করে তৈরী করে নিতে হবে।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ
প্রতি শতকে গোবর সার ৮০ কেজি, ইউরিয়া সার ৭০০ গ্রাম , টিএসপি সার ৭০০ গ্রাম , এমওপি সার ৬০০ গ্রাম, জিপসাম সার ৪০০ গ্রাম, দস্তা সার ৫০ গ্রাম, বোরণ ৪০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন
চারা গজানোর ৪৫-৪৫ দিন পর উচ্ছের গাছ ফল দিতে থাকে। করলার বেলায় প্রায় ২ মাস লেগে যায়। স্ত্রী ফুলের পরাগায়নের ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ফল আহরণ একবার শুরু হলে তা দুমাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ফলন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে উচ্ছে ও করলার হেক্টর প্রতি ফলন যথাক্রমে ৭-১০ টন (৩০-৪০ কেজি/শতাংশ) এবং ২০-২৫ টন (৮০-১০০ কেজি/শতাংশ) পাওয়া যায়।
সংগৃহীত ও সংকলিত

Comments