শিম

শিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। এর বিচিও পুষ্টিকর সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এটি জমি ছাড়াও রাস্তার ধারে, আইলে, ঘরের চালে, গাছেও ফলানো  যায়।
মাটি
দোআাঁশ ও বেলে দোআাঁশ মাটিতে শিম ভাল ফলন হয়।
জাত
দেশে পঞ্চাশটিরও বেশি স্থানীয় শিমের জাত আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাইনতারা, হাতিকান, চ্যাপ্টাশিম, ধলা শিম, পুটিশিম, ঘৃত কাঞ্চন, সীতাকুন্ডু, নলডক ইত্যাদি। বারি শিম-১, বারি শিম-২, বারি শিম-৩ (গ্রীষ্মকালীন জাত), বারি শিম-৪, বারি শিম-৫, বারি শিম ৬,  বিইউ শিম ৩, ইপসা শিম ১, ইপসা শিম ২, একস্ট্রা আর্লি, আইরেট ইত্যাদি আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত।
বীজ বপনের সময়
আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। লাইন করে মাদায় লাগানো যায়। প্রতিটি মাদায় ৪-৫টি বীজ বুনতে হয়।
জমি তৈরি
বেশী জমিতে আবাদ করা হলে কয়েকটি চাষ ও মই দেয়া ভাল। মাদার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতার আকার ৪৫ সেন্টিমিটার রাখতে হবে। এক মাদা থেকে অন্য মাদার দুরত্ব ৩.০ মিটার।
প্রতি মাদার জন্য সারের পরিমাণ
গোবর ১০ কেজি, খৈল ২০০ গ্রাম, ছাই ২ কেজি, টিএসপি ১০০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম। মাদা তৈরি করার সময় এসব সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজালে ১৪ থেকে ২১ দিন পর পর দু’কিস্তিতে ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম করে এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপনের নিয়ম
প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ বুনতে হয়। বীজ বপনের আগে ১০-১২ ঘন্টা বীজ ভিজিয়ে নিতে হবে। প্রতিটি মাদায় ২-৩ টি করে সুস্থ চারা রেখে বাকী চারা তুলে ফেলতে হয়।
পরিচর্যা:
কোন অবস্থাতেই গাছের গোড়ায় পানি যাতে না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে জমিতে প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে। মাঝে মাঝে মাটি নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে। এছাড়া গাছ যখন ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হবে তখন মাদায় গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা মাটিতে পুঁতে বাউনির ব্যবস্থা করতে হবে।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
শিমের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ফল ছিদ্রকারী পোকা ও জাব পোকা। চারা অবস্থায় পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা মহা ক্ষতিকর। লাল ক্ষুদ্র মাকড়ও অনেক সময় বেশ ক্ষতি করে থাকলে ফুল ফুটলে থ্রিপস ক্ষতি করতে পারে। ফল পেকে এলে বিন পড বাগ বা শিমের গান্ধি পোকা ক্ষতি করে। আইপিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে এসব পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিমের ফল ছিদ্রকারী পোকা
ডিম থেকে বের হয়ে আসা কীড়া (লার্ভা) ফুল, ফুলের কুঁড়ি, কচি ফল ছিদ্র করে ভিতরে ঢোকে এবং ভিতরের শাঁস খেয়ে নষ্ট করে, ফলে এগুলো ঝরে পড়ে। অনেক সময় আক্রান্ত শিম কুঁকড়ে যায়। শিমের উপর গোলাকার ছিদ্র হল এ পোকার আক্রমণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অধিক আক্রমণ হলে শিমের ভিতরে ময়লাসহ কীড়া পাওয়া যায়, এসব শিম খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
দমন ব্যবস্থাপনা
১.    ফল ছিদ্রকারী পোকা সহনশীল জাত (যেমন- ইপসা ২) চাষ করা।
২.    আক্রান্ত শিম ও ফুল কীড়াসহ সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলা।
৩.    গাছের কান্ড ও পাতায় ছাই ব্যবহার করা।
৪.    মাটিতে পড়ে যাওয়া পাতা ও আবর্জনা নিয়মিত পরিস্কার করা এবং গাছের শুকনা ও কুঁচকানো পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।
৫.    আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে ক্ষেত জরিপ করে প্রয়োজনে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করা।
রোগ ব্যবস্থাপনা
শিমের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ দু’টি মোজাইক ও অ্যানথ্রাকনোজ।
ফসল সংগ্রহ
আশ্বিন-কার্তিক মাসে  ফুল ধরে। ফুল ফোটার ২০-২৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। ৪ মাসেরও বেশী সময় ধরে ফল দেয়। ফলন প্রতি শতকে ৩৫-৭৫ কেজি, হেক্টর প্রতি ১০-১৫ টন।
সংগৃহীত ও সংকলিত

Comments